‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’  

‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’- এ আহ্বানের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬-কে স্বাগত জানানো হয়েছে রাজধানীর রমনার বটমূলের ঐতিহ্যবাহী ছায়ানটের অনুষ্ঠান থেকে।

যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আগুনে ঝলসে প্রাণ হারানো নুসরাতের জন্য যখন ক্ষোভে ফুঁসছে দেশ, সেই সময় বর্ষবরণের কর্মসূচিতে সব সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে শুভবোধের জাগরণের এই আহ্বান এল।

প্রতিবছরের মতো রোববার দিনের প্রথম প্রভাতেই রমনার বটমূলের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ‘ছায়ানট’ ভোরের সূর্যের আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গেই সরোদবাদন দিয়ে শুরু করে বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান।

রমনার বটমূলে ছায়ানটের প্রায় একশ শিক্ষার্থী-প্রাক্তনী-শিক্ষক এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে একক, সম্মেলক গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়। পরিবেশন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, লালন শাহ্, মুকুন্দ দাস, অজয় ভট্টাচার্য, শাহ্ আবদুল করিম, কুটি মনসুর, সলিল চৌধুরীর গান। ছায়ানট সভাপতির বক্তব্যের শেষে জাতীয় সংগীত দিয়ে সমাপ্ত হয় ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজন।

ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন বলেন, অন্তরে ইচ্ছা জাগুক… ‘ওরা অপরাধ করে’- কেবল এ কথা না বলে প্রত্যেকে নিজেকে বিশুদ্ধ করবার চেষ্টা করি। আর আমরা যেন নীতিবিহীন অন্যায় অত্যাচারের নীরব দর্শকমাত্র হয়ে না থাকি। প্রতিবাদে প্রতিকার সন্ধানে হতে পারি অবিচল- নববর্ষ এমন বার্তাই সঞ্চার করুক আমাদের অন্তরে। শুভ হোক নববর্ষ।

নুসরাত হত্যাসহ দেশব্যাপী চলমান অন্যায়ের প্রতিবাদে এবার একাট্টা হওয়ার আহ্বান জানান সনজীদা খাতুন। সবাইকে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতায় শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা সবাই উঠে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করব, আমাদের ক্ষোভ জানাব, প্রতিবাদ জানাব, দেশে অনাচারের বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, নুসরাত জাহান, তনু, সাগর-রুনি, মিতু… যে সমস্ত বিষয়ে আমরা আজ পর্যন্ত কোনো খবর পেলাম না বিচারের, সেসব বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং বিগত প্রাণগুলোর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকব।

তিনি আরও বলেন, অত্যাচার অনাচার নিপাত যাক, জয় হোক সত্যের সুন্দরের।

এ ছাড়া বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ ১৪২৬ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা।

জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করেছে বাঙালি জাতি। পয়লা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতেছে দেশ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৫ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হয়েছে নতুন বছর ১৪২৬।

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।

দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পয়লা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: